আজ নয়াদিল্লিতে হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিট, ২০২৪-এ ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন যে আজ থেকে ১০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল হিন্দুস্তান টাইমস-এর যাত্রাকাল। মহাত্মা গান্ধী স্বয়ং হিন্দুস্তান টাইমস-এর যাত্রাকালের সূচনা করেন। সেইদিক থেকে বিচার করলে এই সংবাদপত্রটি ১০০ বছরের এক ঐতিহাসিক সময়কালের সাক্ষী।
এই উপলক্ষে আয়োজিত হিন্দুস্তান টাইমস-এর একটি প্রদর্শনীও আজ ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই প্রদর্শনীটি দর্শন করা এক বিশেষ অভিজ্ঞতা বলেই মনে করেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা লাভ এবং ভারতীয় সংবিধানের সূচনাকালে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলি দেখে তিনি এক বিশেষ অভিজ্ঞতার শরিক হয়েছেন। মার্টিন লুথার কিং, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং ডঃ এম এস স্বামীনাথনের মতো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা একদা হিন্দুস্তান টাইমস-এ লেখালেখি করেছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকেও পরম্পরাগতভাবে বহন করে এনেছে এই সংবাদপত্রটি। শুধু তাই নয়, উত্তর-স্বাধীনতাকালের বিভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাও ফুটে উঠেছে হিন্দুস্তান টাইমস-এর বিভিন্ন সংবাদ ও নিবন্ধে। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির খবর পড়েও তিনি বিশেষভাবে উত্তেজিত বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল প্রথম বোড়োল্যান্ড মহোৎসবে তাঁর অংশগ্রহণের কথাও আজ স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আক্ষেপ করে বলেন যে এ সম্পর্কে খবর সেরকমভাবে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়নি। পাঁচ দশক পরে সেখানকার যুব সমাজ অস্ত্র সম্বরণ করে দিল্লিতে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছিলেন। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে আশাপ্রদ। ২০২০ সালে সম্পাদিত বোড়ো শান্তি চুক্তি বহু মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
শ্রী মোদী আরও বলেন যে হিন্দুস্তান টাইমস তার ১০০ বছরের যাত্রাপথে ২৫ বছরের পরাধীনতা এবং ৭৫ বছরের স্বাধীনতার দিনগুলিও দেখে এসেছে। ইতিহাসের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশরা যখন ভারত ত্যাগ করে চলে যায়, তখন বলা হয়েছিল যে দেশ এবার টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আবার, জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় অনেকেরই ধারণা হয়েছিল যে এই অবস্থা বোধহয় চিরকালই চলতে থাকবে। কিন্তু সেই সময়েও ভারতীয় নাগরিকরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে জরুরি অবস্থার অবসান ঘটিয়েছিলেন। এখানেই নিহিত রয়েছে সাধারণ মানুষের শক্তি ও ক্ষমতা। কোভিড অতিমারীকালে দেশের সাধারণ নাগরিকরা যেভাবে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন, সেকথাও আজ প্রসঙ্গত স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে ভারতীয় সমাজে আশা-আকাঙ্ক্ষা আবার নতুন করে জেগে উঠেছে। তাই, আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তে আমরা সেগুলিকেই বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়েছি। সরকার উন্নয়নের এমন এক মডেল গড়ে তুলেছে যেখানে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের এক বিশেষ মেলবন্ধন ঘটেছে। অথচ আজ থেকে ১০ বছর আগেও কেউই সম্ভবত আশা করেননি যে ভারতে এই ধরনের বড় পরিবর্তন বাস্তবায়িত হবে। তাই, ভারতের এই সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে আমাদের স্বপ্নকে আরও বড় করে দেখার এবং তা সফল করে তোলার। চারিদিকে তাই আশা জেগে উঠেছে যে বর্তমান শতকটি হয়ে উঠবে ভারতেরই এক বিশেষ শতক। সেই লক্ষ্যেই সরকার দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। ভারতকে যাতে বিশ্বমানের একটি দেশ রূপে গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্যেই চালিত করতে হবে আমাদের যাবতীয় কর্মপ্রচেষ্টা। সাধারণ মানুষের মনে এই আশা, আস্থা ও বিশ্বাস জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে হিন্দুস্তান টাইমসকেও অবশ্যই এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এক উন্নত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই সংবাদপত্রটিকে এগিয়ে আসতে হবে তাদের দীর্ঘ ১০০ বছরের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়ে। এইভাবেই হিন্দুস্তান টাইমস পরিবর্তনশীল ভারতের এক নতুন শতাব্দীর সাক্ষ্য বহন করে যাবে।